একজন রোগীর হার্ট অ্যাটাক হলে খুব দ্রুত কিছু ব্যবস্থা নিলে ঘটনার ভয়াবহতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এ ব্যাপারগুলো সম্পর্কে সকলের ধারণা থাকা আবশ্যক।

১. প্রথমেই ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে

বুকে ব্যথা অনুভূত হলে সাথে সাথেই রোগীকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খাওয়াতে হবে। অনেক রোগীর অ্যাসপিরিনে এলার্জি থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তার রোগীকে অন্য যে ব্যথানাশক ওষুধ লিখে দিয়েছেন তা খাওয়াতে হবে। ব্যথানাশক ওষুধ চিবিয়ে সেবন করার উপযুক্ত কিনা তা ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নেওয়া ভালো। কারণ গলাধঃকরণ করা ওষুধের তুলনায় চিবিয়ে সেবন করা ওষুধ দ্রুত শরীরের উপর ক্রিয়া করে। চিবিয়ে সেবন করার মতো শক্তি না থাকলে ওষুধ গুঁড়ো করে সেবন করতে সাহায্য করতে হবে। 

২. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে

দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হবে। কয়েকটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের অ্যাম্বুলেন্স নাম্বার তাই সবসময় মুঠোফোনের স্পিড ডায়ালে রেখে দেওয়া উচিত। এছাড়া বাসায় একটি খাতায় এবং রোগীর পকেটে চিরকুট বা কার্ড হিসেবে এই নাম্বারগুলো রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। এতে প্রয়োজনের সময় ফোন নাম্বার পেতে অসুবিধা হবে।

৩. রোগীর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে কিনা খেয়াল করতে হবে

রোগীর নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা হলে শরীরে পর্যাপ্ত বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য শরীরের অতিরিক্ত কাপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। অনেক সময় রোগীর জিহ্বা গলায় আটকে যেতে পারে। এরকম হলে দ্রুত তা ছাড়িয়ে দিতে হবে। বমি আসলে যাতে তা শ্বাসনালীতে চলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার।

৪. রোগী কোথাও ভ্রমণে গেলে সাথে প্রয়োজনীয় তথ্য সম্বলিত চিরকুট রাখতে হবে

হৃদরোগীদের অন্যদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। একাকী কোনো যানবাহনে বা কোনো অনুষ্ঠানে থাকা অবস্থায় হৃদরোগীদের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তখন যাতে দেরী না হয় সেজন্য রোগীর পকেটে সবসময় আগে থেকে একটি কার্ড বা চিরকুট রাখতে হবে। সেখানে তার রক্তের গ্রুপ, কোন কোন ওষুধ ও খাদ্যে অ্যালার্জি রয়েছে ইত্যাদি যাবতীয় তথ্য থাকবে। আজকাল অধিকাংশ মানুষের মুঠোফোন লক করা থাকে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু ফোন নাম্বার ও রোগীর ব্যক্তিগত ডাক্তারের নাম্বারও সেই চিরকুটে দিয়ে রাখা উচিত। এতে অপরিচিত মানুষদের সাহায্য করতে সুবিধা হবে।

৫. হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গেলে সিপিআর পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে

হার্ট অ্যাটাক হলে রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা জ্ঞান  হারিয়ে  হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে দুই হাত দিয়ে রোগীকে সিপিআর (কার্ডিয়াক পালমোনারি রিসাসসিটেশন) দিতে হবে। ইন্টারনেটে সিপিআর কিভাবে দিতে হয় তা নিয়ে অসংখ্য ভিডিও ও আর্টিকেল রয়েছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের কাছ থেকে হাতে কলমে পদ্ধতিটি শিখে নেওয়া হয়। এতে বিপদের সময় আপনার অভিজ্ঞতা আরেকজনের জীবন বাঁচানোর কারণও হতে পারে।

মনে রাখতে হবে যে, সিপিআর পদ্ধতি কেবল হৃৎপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করলেই প্রয়োগ করতে হবে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড কাজ না করলেও সাময়িকভাবে দেহে রক্ত চলাচল অব্যাহত থাকে।

৬.  বিপদের মধ্যে কী কী করতে হবে তার একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে রাখা উচিত

পরিবারে হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে সবসময় আসন্ন দুর্ঘটনার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে রাখা জরুরী। সকল বয়সের সদস্যকে এই পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এতে আসল বিপদের সময় কী পদক্ষেপ নেওয়া লাগবে তা নিয়ে কোনো কালক্ষেপণ হবে না। যেকোনো দুর্ঘটনা সঠিকভাবে মোকাবেলা করার ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি পুরো ব্যাপারটিকে অনেক সহজ করে দেয়। সব রোগজনিত দুর্ঘটনা আগে থেকে জানিয়ে আসে না। তাই সকলের এ ব্যাপারে দূরদর্শিতা আর পারস্পরিক সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃজেনে নিন শরীরের কোন আভাস থেকে বুঝবেন আপনার হার্ট অ্যাটাক হতে চলেছে!

Leave a comment