গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০-৮০ শতাংশ হার্টঅ্যাটাকের ঘটনা ঘটে ঘরে বা লোকালয়ে। এসব ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে নেয়া বা চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভবপর হয় না। ফলে এড়ানো যায় না অনেক প্রাণহানি। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে হৃদস্পন্দন ও রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তি ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে অচেতন হয়ে যায়।
৩০-৬০ সেকেন্ডের মধ্যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘটে মৃত্যু। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসা শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত সিপিআর ব্যক্তির রক্ত চলাচল ও শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখতে সাহায্য করে।
সিপিআর প্রয়োগের নিয়ম
যে কোনো মানুষ সিপিআর দিতে পারেন, যদি আগে থেকে ধারণা নিয়ে থাকেন। সবার উচিত সিপিআর সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা। এই সামান্য ক্ষণের কারণে একজন মানুষ অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষার কারণ হতে পারেন। একজন মানুষের জীবন রক্ষার কাজে নিজেকে জড়িত করার মাঝে যে কী পরিমাণ অসাধারণ তৃপ্তি তা নিশ্চয়ই বলে বোঝাতে হবে না। প্রথমেই কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে চিৎকার দিয়ে অন্য কারো সাহায্য চাইতে হবে। দুজন হলে সহজে কাজগুলো করা যাবে। এ ছাড়া হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করার জন্যও বাড়তি লোক লাগবে।
সিপিআরের শুরুতে আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশের অবস্থা দেখে নিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো বিপদসংকুল পরিবেশে থাকলে তা দূর করা, যাতে উদ্ধারকারী ব্যক্তিই আক্রান্ত না হয়। যেমন বৈদ্যুতিক তার বা কোনো বিষাক্ত কিছু আশপাশে থাকলে তা সরিয়ে নেয়া।
এর পর দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তির জ্ঞান আছে কিনা। জ্ঞান থাকলে তাকে স্বাভাবিকভাবে চিত করে শুইয়ে দিতে হবে। যাতে তিনি ধীরস্থিরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন।
জ্ঞান না থাকলে তার শ্বাস নেয়ার পথ যেমন- নাক, মুখ ও গলার ভেতরের অংশ পরিষ্কার আছে কিনা দেখতে হবে। তার মাথা পেছনের দিকে টেনে, থুঁতনি ওপরের দিকে তুলে শ্বাসনালি খুলে দিতে হবে। যদি কফ-রক্ত বা অন্য কোনো কিছু এ পথে আটকে থাকে, তবে তা সরিয়ে শ্বাস নেয়ার পথ করে দিতে হবে এবং সিপিআর প্রয়োগ শুরু করতে হবে।
ব্যক্তির এক পাশে এসে বুক বরাবর বসে এক হাতের তালুকে বুকের মাঝ বরাবর স্থাপন করতে হবে। তার ওপর অপর হাত স্থাপন করে ওপরের হাতের আঙুল দিয়ে নিচের হাতকে আঁকড়ে ধরতে হবে। হাতের কনুই ভাঁজ না করে সোজাভাবে বুকের ওপর চাপ দিতে হবে।
এমন গতিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন প্রতি মিনিটে ১০০-১২০টি চাপ প্রয়োগ করা যায়। এভাবে প্রতি ৩০টি চাপ প্রয়োগের পর আক্রান্তের মুখে মুখ রেখে দুবার ফুঁ দিতে হবে। এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করতে হবে যেন বুকের পাঁজর ২ থেকে ২.৫ ইঞ্চি নিচে নামে। যাতে চাপ হৃৎপিণ্ডের ওপর চাপ পড়ে।
হাসপাতালে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত বা জ্ঞান ফিরে আসা অথবা স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হওয়া পর্যন্ত একইভাবে সিপিআর চালিয়ে যেতে হবে।
জ্ঞান ফিরলে বা শ্বাস-প্রশ্বাস চালু হলে তাকে রিকভারি পজিশনে (একপাশে কাত করে) শুইয়ে দিতে হবে। এর পর হাসপাতালে নিয়ে পরবর্তী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
আরও পড়ুনঃহার্ট অ্যাটাক হলে সাথে সাথে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ?