মানুষের শরীরে লিভার একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমাদের শরীর সুস্থভাবে সঞ্চালনার ক্ষেত্রে এই অঙ্গের ভূমিকা অপরিসী। তাই মাঝে মাঝেই শরীরের এই অঙ্গের খোঁজখবর রাখাটাও জরুরি এবং এটিকে সুস্থ কীভাবে রাখতে হয় সেইবিষয়েও যথেষ্ঠ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

ফুটবলের সাইজের এই লিভার নামক অঙ্গটি আমাদের পাচন কার্যে সাহায্য করে।লিভার আমাদের পাঁজরের নীচে ডানদিকে তলপেটের ঠিক উপরের দিকে থাকে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে লিভারের ওজন হয়ে থাকে ১ থেকে ১.৫০ কেজি। এক কথায় বলতে গেলে লিভার হলো মানব দেহের একটি পাওয়ার স্টেশন।মানুষের রক্তের মধ্যে Coagulation Factors নামে প্রবাহিত অসংখ্য কেমিক্যালস রয়েছে, যা রক্তকে সঞ্চালিত রাখে। সব ক’টি Coagulation Factors শুধু লিভার থেকে তৈরি হয়। রক্তের সঞ্চালন এবং জমাট বাঁধার ক্ষমতা একমাত্র লিভারের কার্যক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল।আমরা যা কিছু খাই, সেই খাবারগুলো পরিপাকতন্ত্রে প্রাথমিক হজমের জন্য পিত্তরস অপরিহার্য। পিত্তরস ছাড়া খাদ্যবস্তু হজম সম্ভব নয়। এই পিত্তরস শুধু লিভার কোষ তৈরি করে।

লিভারের সমস্যা বিভিন্ন কারণে দেখা যেতে পারে। জিনগত কারণেও অনেক সময় মানুষের দেহে দেখা দেয় লিভারের সমস্যা আবার মানুষের জীবনচালনার ধরণের জন্যও যেমন অতিরিক্ত পরিমানে মদ্যপান কিংবা শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে গেলেও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কোন কোন লক্ষন দেখে বুঝবেন লিভরের সমস্যা?

১) যদি হঠাৎ করেই খাওয়া-দাওয়ায় অনীহা তৈরি হয়, যদি দেখেন খাবার খেতে ইচ্ছেই করছে না, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। কারণ, এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।

২) পাঁজরের একটু নীচে, পেটের ডান দিকে ব্যথা হলে সাবধান। এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না।

৩) কিছু খেলেই বমি পাচ্ছে? সারাক্ষণ বমি বমি ভাব? এটি যকৃৎ বা লিভারের সমস্যার কারণে হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের সমস্যা হয়েছে কিনা, চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরীক্ষা করিয়ে দেখুন।

৪) হঠাৎ করেই যদি আপনার গায়ের চামড়া কোন জায়গায় খুব শুষ্ক হয়ে যায়, খোসা খোসা উঠতে থাকে, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। এটি যকৃতের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

৫) মল ও মূত্রের রং যদি হঠাত করে পাল্টাতে থাকে, তাহলে এখনই সাবধান হওয়া উচিত। আপনার যকৃতে কোনও সমস্যা হচ্ছে। হজমেরও সমস্যা হচ্ছে। অবহেলা না করে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।

৬) যদি আচমকা আপনার চোখের সাদা অংশের রং, গায়ের চামড়া হলুদ হতে শুরু করেছে, তাহলে বিষয়টিকে অবহেলা করবেন না। কারণ, এটি জন্ডিসের লক্ষণ। অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যান।

৭) যদি আপনার পেটের নিচের অংশ অস্বাভাবিক রকম ফুলে ওঠে এবং দীর্ঘদিন একই অবস্থা থাকে তাহলে সাবধান হয়ে যান। এটি যকৃতে জল জমার লক্ষণ হতে পারে। একে লিভার সিরহোসিস বলা হয়।

কী কী কারণে এই রোগ দেখা দিতে পারে?

বিভন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এই রোগ দেখা দিতে পারে। আবার জিণগত কারণেও এই রোগ শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও আরও কয়েকটি কারণ থাকে যার কারণে এই রোগ ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।

১) প্রচন্ড মদ্যপান করলে।

২) ব্যবহার করা ইঞ্জেকশন পুনরায় ব্যবহার করলে।

৩) কোনো অপরিস্কার জায়গা থেকে শরীরে ট্যাটু করলে।

৪)  অরক্ষিত যৌনাচারের ফলে।

৫) শরীরে কোনো ভাবে কোন বিষাক্ত পদার্থের প্রবেশ ঘটলে।

৬) মধুমেহ রোগ থাকলে।

৭) শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমলে।  

লিভার ভালো রাখার ঘরোয়া উপায়:

১) লেবুর গরম জল : অন্যান্য খাবারের তুলনায় কুসুম গরম জলে লেবু চিপে খাওয়ার অভ্যাস লিভারে অনেক বেশি এনজাইম উৎপাদনে সহায়তা করে, এছাড়াও ভিটামিন সি গ্লুটেথিয়ন নামক যে এনজাইম উৎপন্ন করে তা লিভারের ক্ষতিকর টক্সিন দূর করে লিভার পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে ১ গ্লাস কুসুম গরম জলে সামান্য লেবু চিপে পান করুন। এতে করে লিভার পরিষ্কার থাকবে।

২) সবুজ চা : সবুজ চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের দেহের ফ্রি সার্জিকেল টক্সিসিটি দূর করে এবং আমাদের লিভার পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন ১-২ কাপ সবুজ চা পান করার ফলে লিভারে জমে থাকা টক্সিন দূর হয়ে যায় এবং পুরো দেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়।

৩) রসুন : রসুনে রয়েছে সালফারের উপাদান যা লিভারের এঞ্জাইমের সঠিক কাজে সহায়তা করে। এছাড়াও রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন ও সেলেনিয়াম যা লিভার পরিষ্কারের পাশাপাশি লিভারের সুস্থতা নিশ্চিত করে। তাই খাবারে প্রতিদিন রসুন ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

৪) হলুদ : লিভারের সবচেয়ে পছন্দের খাদ্য উপাদান হলুদ। হলুদ একটি নিরাময় ওষুধ হিসেবে বিবেচিত। এলিভারের ডিটক্স এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে, লিভারকে পরিষ্কার করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে সেইসঙ্গে আমাদের ইমিউন সিস্টেম এর জন্য ব্যবহার করা হয় হলুদ। এটা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। 

৫) আপেল : পেক্টিন নামক এক প্রকার উপাদান রয়েছে আপেলে। যা শরীরের খারাপ উপাদানগুলো দূর করে ও পরিপাকতন্ত্রকে টক্সিনমুক্ত করে। লিভারকেও টক্সিনমুক্ত করার কারণে, লিভার সঠিকভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারে।

৬) সবুজ শাকসবজি : লিভারকে পরিষ্কার ও সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রে সব থেকে ভাল খাবার হল সবুজ শাকসবজি। সবুজ শাক রান্না করে বা জুস করে খেতে পারেন। এটিতে রক্তের টক্সিন মুক্ত রাখার উপাদান রয়েছে।

Leave a comment