অনেকে বলেন লিভারের রোগকে বলা হয় নিঃশব্দ ঘাতক। সাধারণত লিভারের কোনো সমস্যা সহজেই প্রথমে ধরা পড়ে না।তবে কিছু কিছু লক্ষণ অল্প হলেও লক্ষ্য করা যায়। সেইসব লক্ষণগুলির সম্বন্ধে যদি জানা থাকে তবে আগে থেকে সতর্ক হওয়া যায় এবং বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এখন তাই লিভারেরই একটি রোগ লিভার সিরোসিস নিয়ে আলোচনা করা হবে।
লিভার সিরোসিসে যকৃতে সূক্ষ্ম সুতার জালের মতো ফাইব্রোসিসের বিস্তার ঘটে। যকৃতে ছোট ছোট গুটি দানা বাঁধে। ক্রমে যকৃৎ স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারায়।দীর্ঘদিন অ্যালকোহল গ্রহণ, যকৃতে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি, অতিরিক্ত আয়রন, কপার জমে যাওয়া এবং কিছু অটোইমিউন রোগের (দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় কোনো অস্বাভাবিকতার কারণে সৃষ্ট) কারণেও লিভার সিরোসিস হতে পারে।
এই রোগের লক্ষণগুলি কি?
লিভার সিরোসিস হলে অনেক সময় কোনো লক্ষণ দেখা যায় না যতক্ষণ না লিভার সাংঘাতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।এমনিতে যখন লক্ষণগুলি দেখা যায় তখন নিম্নোক্ত এই লক্ষণগুলি দেখা যেতে পারে –
১) শরীরে দূর্বলতা
২) খাদ্যে অরুচি
৩) ওজন হ্রাস
৪) বমি ভাব বা বমি
৫) বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত
৬) শরীরে জল আসা
৭) পা ফুলে যাওয়া
৮) ত্বকে চুলকানি হওয়া এবং খোসা খোসা ওঠা
৯) ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া
১০) মাকড়সার জালের মত রক্তের ছোপ শরীরে দেখা দেওয়া
১১) মাসিক ঋতুচক্রে সমস্যা দেখা দেওয়া (মহিলাদের ক্ষেত্রে)
১২) সারক্ষণ অবসাদে ভোগা কিংবা কথা বলার সময় কথা জড়িয়ে যাওয়া
কেন হয় লিভার সিরোসিস?
কম্পেনসেটেড সিরোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তির তেমন কোন লক্ষণ থাকে না বললেই চলে। অনেক সময় রোগীরা দুর্বলতা, সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, দাতের মাড়ি বা নাক থেকে রক্ত পড়া, পেটের ডান পাশে ব্যাথা, জ্বর-জ্বর ভাব, ঘন-ঘন পেট খারাপ হওয়া ইত্যাদি সমস্যা অনুভব করতে পারেন ।
এডভান্সড সিরোসিসে চিত্রটি কিন্তু একদম বদলে যায়। এসময় পায়ে-পেটে পানি আসে, জন্ডিস হয় এবং রোগী এমনকি অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। রক্তবমি ও পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া, ফুসফুসে পানি আসা, কিডনি ফেইলিউর, শরীরের যে কোন জায়গা থেকে আনকন্ট্রোলড রক্তপাত ইত্যাদি দেখা দিতে পারে । আর সব চেয়ে যা ভয়াবহ তা হলো, লিভারে দেখা দিতে পারে ক্যান্সার।
প্রতিরোধের উপায়?
প্রতিরোধই পারে লিভার সিরোসিস রোগে মৃত্যুর হার কমাতে। লিভার সিরোসিস প্রতিরোধে কিছু করণীয় হলো—
১) অতিরিক্ত অ্যালকোহল বর্জন করুন।
২) রক্ত দেওয়া বা নেওয়ার আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন। এসব ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা দিন।
৩) কম তেলযুক্ত খাবার খান। তেলে ভাজা গুরুপাক বা মসলাদার খাবার, জাংক ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
৪) দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় বেশি করে রাখুন শাকসবজি ও ফলমূল।
৫) ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহারের আগে সতর্ক হোন।
৬) প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
৭) নিরাপদ যৌনসম্পর্ক বজায় রাখুন।
৮) হেপাটাইটিস ‘বি’র প্রতিষেধক নিন। পাশাপাশি দূষিত কোনো যন্ত্রপাতি দিয়ে অপারেশন করা, দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালন প্রতিরোধ করুন। সেলুনে সেভ করাসহ যেকোনো কাটাকাটি বা সেলাইয়ের সময় এই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন।
৯) কেউ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত কি না জানতে স্ক্রিনিং করুন। ‘বি’ বা ‘সি’তে আক্রান্ত হলে নিয়মিত স্ক্রিনিং করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন; কেননা লিভার সিরোসিস প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে তা অনেক ক্ষেত্রে নিরাময় করা সম্ভব।
১০) শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমান।
১১) ফ্যাটি লিভারের নিয়মিত চিকিৎসা নিন।
এই রোগের চিকিৎসা কী?
সিরোসিসে আক্রান্ত যে কোন ব্যাক্তির উচিত দ্রুত লিভার বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নেয়া ও নিয়মিত চিকিতসাধীন থাকা। এতে দীর্ঘদিন ভালো থাকা যায়। পাশাপাশি সিরোসিসের কারণ শনাক্ত করে তার চিকিৎসা করা গেলে লিভারের খারাপের দিকে যাওয়ার ঝুকিও অনেক কমে যায়। হেপাটাইটিস বি থাকার কারণে যদি জন্ডিস হয়। যদি কারো ফ্যাটি লিভার ডিজিস থেকে থাকে। তাদের এই সমস্যা হতে পারে। এসব আলট্রাসনোগ্রাম জাতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে ধরা পড়তে পারে।লিভার সিরোসিস ও এর কারণগুলোর আধুনিকতম চিকিৎসা সম্ভব।এছাড়াও আছে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের ব্যবস্থা।ভারতে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের রয়েছে উন্নতম ব্যবস্থা। সেই ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য Madre Healthcare কে পাশে পাবেন সবসময়।ন্যূনতম খরচে এই সংস্থার মাধ্যমে কোলকাতার সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির হাসপাতালে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে সহজেই করিয়ে নিতে পারবেন লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট।