নিজেকে চিরতরুণ রাখতে চাই টান টান সতেজ ত্বক আর মেদহীন ছিপছিপে স্বাস্থ্য। পুরুষ বা মহিলা সবারই সমস্যা হল পেটের মেদ, যার কারণে দেখতে যেমন খারাপ লাগে, তেমনই কোনও পোশাকেই ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠতে চায় না। অত্যধিক মেদ জমলে চলাফেরার ক্ষেত্রেও অসুবিধার সৃষ্টি হয়।
বয়স পেটের মেদ বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কারণ। তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া, পরিশ্রম না করা, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, ট্রান্সফ্যাট (কেক, পেস্ট্রি, বার্গার, পিৎজা) আছে এমন খাবার বেশি খাওয়া এবং জিনগত কারণে অল্পবয়সিদেরও এই সমস্যা হতে পারে।
মেদ ঝরাতে
১. পেটের মেদ ঝরাতে রোজ ব্যায়াম করা দরকার।
২. দিনে তিনবার ভারী খাবার এবং তিনবার হালকা জলখাবার এভাবে অন্তত ছ’বার খেতে হবে।
৩. যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে কার্বোহাইড্রেট এবং সুগার।
৪. ভাত বা রুটি বেশি খেলে চলবে না। ৫. জলখাবারে ফল, স্যালাড, ছোলা, মুগ, মুড়ি, ছাতু ইত্যাদি খান।
৬. মানসিক উদ্বেগ, হতাশা, গভীর অবসাদ মেদ জমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ। তাই যতটা সম্ভব মনকে সমস্যামুক্ত রাখা দরকার।
৭. হজমের সমস্যা এবং মেটাবলিজমের হার কম থাকলে পেটে জমতে পারে মেদ। হজম ঠিকমতো হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখতে হবে।
৮. পানীয় এবং ঠান্ডা খাবার দেহে মেদ বৃদ্ধির কারণ।
৯. উষ্ণ জল পান মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এতে ডিটক্সিফিকেশান হয় এবং মেটাবলিজম বাড়ে। দিনে দু’বার ১০০ এমএল উষ্ণ জল পান করলে মেদ নাশ হয়।
১০. উষ্ণ জলে সামান্য ত্রিকুট চূর্ণ এবং লেবুর রস (২-৩ ফোঁটা) মিশিয়েও পান করা যেতে পারে। এতে হজম শক্তি বাড়ে। ১১. তরমুজ এবং আনারস খেলে পেটের
মেদ কমে।
১২. এছাড়া লো ক্যালরি স্ন্যাক্স হিসেবে খাওয়া যায় টোম্যাটো, বিন্স এবং শসা। ১৩. আনারসে কিছু এনজাইম থাকে যা . ফ্ল্যাট আবডোমেন তৈরি করে।
১৪. যেসব ভেষজ পেটের মেদ নাশ করে তা হল—
● দারুচিনি: খাবারে মশলা হিসেবে খেলে বা জলে ফুটিয়ে সেই জল পান করলে পেটের মেদ কমে। দারুচিনিতে আছে সিনাস্যালডিহাইড যা ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে। চা, কফি, অন্যান্য গরম পানীয়-এর সঙ্গে দারুচিনি পাউডার মিশিয়ে খাওয়া যায়। এতে ফ্যাট মেটাবলিজম বাড়ে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং ব্লাড গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
● মেথি: পেটের মেদ কমাতে খুবই কার্যকর। মেথিচূর্ণ মেশানো উষ্ণ জল নিয়মিত খেলে পেটের মেদ কমতে সাহায্য করে। মেথি ফ্যাট মেটাবলিজমে সাহায্য করে। এছাড়া ওজন কমাতে, কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ডায়াবেটিস কমাতে ব্যবহার করা হয়। মেথি হজমশক্তি বাড়ায় এবং কনস্টিপেশন কমাতে সাহায্য করে। যাঁরা পেটের মেদ কমাতে চান তাঁরা মেথি এবং মেথি শাক দুই-ই খেতে পারেন। তবে গর্ভাবস্থায় মেথি খাওয়া যাবে না। মেথি খিদেবোধ কমিয়ে দিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এটি মেটাবলিক রেট বাড়ায় এবং অবাঞ্ছিত ক্যালরি দহনে সাহায্য করে। মেথি মশলা হিসেবে খাওয়া যায়। আবার মেথির বীজ জলে ভিজিয়ে অঙ্কুরিত অবস্থায়ও খাওয়া যায়। চায়ের সঙ্গে মেথি ফুটিয়ে নিয়েও তা পান করা যায়।
● পুনর্নবা: ওজন কমাতে এবং মেদ দূর করতে সাহায্য করে। পুনর্নবা জলে ফুটিয়ে ছেঁকে সেই ক্বাথ পান করলে দেহ থেকে অতিরিক্ত জলীয় পদার্থ বেরিয়ে যায়। ফলে টক্সিন দূর হয় এবং দেহ মেদহীন হয়। পুনর্নবা মেটাবলিজম বাড়াতেও সাহায্য করে।
● ত্রিফলা: ৩ গ্রাম মাত্রায় ত্রিফলা পাউডার জলে মিশিয়ে নিয়মিত খেলে তা পেটের মেদ কমায়। এক্ষেত্রে ঈষদুষ্ণ জল ব্যবহার করলে ভালো ফল হবে।
● জোয়ান, মরিচ, জিরে এবং সৈন্ধব লবণচূর্ণ সমমাত্রায় নিয়ে নিয়মিত খেতে হবে। এই মিশ্রণ দই-এর ঘোলে মিশিয়ে পান করলে পেটের মেদ কমে। এতে মিন্ট (পুদিনা) জ্যুস কয়েক ফোঁটা মেশানো যেতে পারে।
১৫. ৫০ এমএল করে করলা বা উচ্ছের রস পেটের মেদ কমাতে খুবই উপকারী।
১৬. গুগগুল ঘটিত ওষুধ (যেমন মেদোহর গুগগুল) পেটের মেদ কমায়। গুগগুল খাওয়ার জন্য উষ্ণ জল ব্যবহার করতে হবে।
১৭. অমলতাস ফলের মজ্জা জলে ফুটিয়ে ক্বাথ হিসেবে খেলে মেদ কমে। এ ক্ষেত্রে যতটা ফলমজ্জা, তার ৮ বা ১৬ গুণ জল মিশিয়ে ফোটাতে হবে।