নতুন বা পুরোনো যে কোনো রকমের হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যদি কিছু নিয়ম মেনে চলা হয়। হাঁটুর ব্যথা থাকলে কিছু জিনিস করতে হয় আর কিছু জিনিস একেবারেই করা উচিত নয়। সেইগুলি সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান থাকা উচিত। তাহলে হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা কোন সমস্যাই নয়।
হাঁটুর ব্যথায় কোন কোন জিনিস করা একেবারেই উচিত নয়ঃ
১) বেশিক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া বা বেশিক্ষণ শুয়ে বসে থাকা একেবারে উচিত নয়। বেশিক্ষণ বিশ্রাম নিলে তা মাংসপেশিকে শিথিল করে দেয় যা কিনা প্রচন্ড পরিমানে হাটুর যন্ত্রণা উদ্রেক ঘটায়। হাঁটুর ব্যথা কমানোর জন্য কিছু এক্সারসাইজ করা উচিত যা হাটুর জন্য একেবারে নিরাপদ হবে। যদি নিজে এসেই ব্যাপারে নিশ্চিত না হন, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
২) পড়ে গিয়ে হাঁটুর ক্ষত করা থেকে বিরত থাকুন। হাঁটুতে ব্যথা হলে সেই হাটু শক্ত থাকে না। পায়ের হাঁটুতে ব্যথা থাকলে মানুষের পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই হাঁটুতে ব্যথা থাকলে পড়ে যাওয়ার থেকে বাঁচার জন্য বাড়িতে থাকার চেষ্টা করুন। আর বাড়িতে থাকাকালীন বাড়ির বেশি আলো যুক্ত অঞ্চল ব্যবহার করুন কিংবা সিঁড়িতে ওঠা কালীন সিঁড়ির রেলিং ধরে বেয়ে চলুন। যদি উঁচু কোথা থেকে কিছু পাড়তে হয় তাহলে একটি বড় টুল মই ব্যবহার করুন।
৩) কখনোই নিজের ওজন বাড়তে দেবেন না। আপনার শরীরের ওজন যত বাড়বে আপনার হাঁটুর ওজন তোলার ক্ষমতা তত কমে যাবে। ফলে হাট ধিরে ধিরে কমজোর হয়ে পড়বে। যতটা সম্ভব পারা যায় নিজের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।
৪) যদি হাঁটুতে প্রচন্ড পরিমাণে ব্যথা থাকে তাহলে হাটার সময় লাঠি বা ক্রাচ জাতীয় কিছু ব্যবহার করুন। লাঠি ব্যবহার করতে লজ্জা পাবেন না। লাঠি ব্যবহার করলে আপনি পড়ে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবেন এবং আপনার হাঁটু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এছাড়াও হাটুতে জোর পাওয়ার জন্য নিক অ্যাপ ব্যবহার করা যায়।
৫) কখনোই নিজের জুতোকে নিজের ভোগান্তির কারণ বানাবেন না। সব সময় সঠিক জুতো ব্যবহার করবেন। নরম সোল যুক্ত জুতো হাঁটুর ব্যথার পক্ষে একেবারে উপযুক্ত। আপনার যদি এই ব্যাপারে কিছু জ্ঞান না থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিজের জন্য সঠিক জুতো বাছুন।
আরও পড়ুনঃজেনে নিন হাঁটুর ব্যথার কারণ গুলো সমন্ধে!
হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কী কী করা উচিত?
১) হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য রোজ নিয়মিত শরীর চর্চা করা উচিত। এতে মাংসপেশি শক্ত হয় এবং তার নমনীয়তা বাড়ে। এটি হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
২) হাঁটুর ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে ব্যথা হচ্ছে সেখানে বরফ দিয়ে শেক দিন। এবং কোন কাপড় দিয়ে বা ক্রেপ ব্যান্ডেজ দিয়ে সেই জায়গা ভালো করে বেঁধে রাখুন। আর হাঁটু ওপরের দিকে তুলে রাখার চেষ্টা করুন।
৩) হাঁটুর ব্যথা থাকলে আকুপাংচার করিয়ে দেখতে পারেন। আকুপাংচার একটি পুরনো চাইনিজ পদ্ধতি যেটি কিনা সারা শরীরের কিছু কিছু বিশেষ জায়গায় সুচ ঢুকিয়ে করা হয়। এটির বিস্তৃত খ্যাতি আছে ব্যথা কমানোর জন্য।
৪) প্রচন্ড হাঁটুর ব্যথা হলে ঠান্ডা গরম জলে শেক দিন। প্রথমে বড় প্লাস্টিকের ব্যাগে বরফ নিয়ে পনেরো-কুড়ি মিনিট ক্ষত জায়গায় শেক দিন। যেই প্লাস্টিকের বরফের থলিটি দিয়ে আপনি সেটি দেবেন সেটিকে একটি তোয়ালে দিয়ে মুড়ে নেবেন। যাতে আপনার ত্বকে সরাসরি ঠান্ডার আঘাত না লাগতে পারে। এবং তারপরে কোন হিটিং প্যাড দিয়ে কিংবা গরম তোয়ালে দিয়ে পনেরো কুড়ি মিনিট ধরে তিন চারবার দিনে ওই ক্ষতস্থানে শেক দিন। এভাবে একবার ঠান্ডা এবং একবার গরম পাল্টে পাল্টে শেক দিলে, হাঁটুর ব্যথা অনেকটাই কমে যায়।
৫) প্রচন্ড পরিমানে হাটুর যন্ত্রণা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বাড়িতে ঘরোয়া টোটকা না ব্যবহার করে ভালো ডাক্তারের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ নিলে তা কাজ করে অনেক বেশি তাড়াতাড়ি।
এই কতগুলি নিয়ম মেনে চলে আপনার হাঁটুর যত্ন নিন এবং সুস্থ থাকুন। আপনি সুস্থ থাকলে জীবন খুব সুন্দর হবে।
আরও পড়ুনঃহাঁটুর ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন? জেনে নিন তার লক্ষণ এবং তার থেকে সতর্ক থাকার উপায়!