প্রোস্টেট গ্রন্থির নিরীহ স্ফীতি একটি বয়স জনিত পুরুষদের সমস্যা। একে সংক্ষেপে ইংরেজীতে BEP বা BPH বলে। সাধারণতঃ ৪০ বৎসর বয়সের পরে প্রোস্টেট গ্রন্থির মাংসস্ফীতি শুরু হয়। স্ফীত প্রোস্টেট গ্রন্থি তার মাংস পিন্ডের মধ্যে যে মূত্রনালী থাকে তাকে চেপে ধরে ফলে মূত্রত্যাগে সামান্য বাধা শুরু করে একেবারে বন্ধ হওয় পর্যন্ত যে কোন পর্যায়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রোস্টেট গ্রন্থি স্ফীত হওয়ার কারণ কি? 

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের একটি পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনের ফল গিয়ে পড়ে প্রোস্টেটগ্রন্থির ওপর। প্রোস্টেটগ্রন্থির ভেতরে মেটাবলিজম বলে একটি শব্দ আছে, সেটা বেড়ে যায়, বেড়ে গেলে আস্তে আস্তে প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হতে শুরু করে। এটিই মূলত কারণ। এই কারণে যখন প্রোস্টেটগ্রন্থি বড় হয়ে যায়, তখনই সমস্যাগুলোর সৃষ্টি হয়। প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি ও তার চাপে মূত্রনালি সংকুচিত হয়ে গিয়ে প্রস্রাবের যাতায়াতে সমস্যা বাড়ায়।  প্রস্টেটের আয়তন বৃদ্ধির কারণে তা ৯ গ্রাম থেকে ৯০, বা ৯০০ গ্রাম হলে প্রস্রাবের যাতায়াতের পথ সরু হয়ে যায় , তার আগে অবধি তা নিয়ে ভেবে ভয় পাওয়ার কোনও মানে হয় না।  ভাবতে হবে তখনই, যখন তা প্রস্রাবের যাতায়াতের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।  যাতায়াতের পথ আটকে গেলে প্রস্রাবের বেগ জমে যায়,প্রস্রাবও ধীরে ধীরে হয়।  অনেক সময় প্রথমদিকে প্রাথমিক পর্যায়ের সমস্যার সূত্রপাত হবার পরেও সেই ব্যক্তি সমস্যাটিকে ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারেন না।  সে ক্ষেত্রে অনেকটা সমস্যা তৈরি হওয়ার পর উপসর্গ শুরু হয়।  এমনও হতে পারে যে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে বারবার টয়লেটে যেতে হচ্ছে, কারণ কোনওবারই মূত্রনালি পুরোপুরি খালি হচ্ছে না।  এই বাধা দূর করতে মূত্রনালিকে বাড়তি কাজ করতে হয় বলে মূত্রনালির দেওয়াল স্থূলকায় ও কম প্রসারণশীল হয়ে পড়ে।

এই রোগের লক্ষণ কী? 

প্রস্টেট বৃদ্ধি, খুব ধীরে হয় তাই প্রথম থেকে কিছু কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়।  গ্রন্থিটি যথেষ্ট বড় হয়ে মূত্রনালির ওপরে চাপ সৃষ্টি করলে অনেকগুলি উপসর্গ ফুটে ওঠে। 

১) প্রস্রাব নির্গমের বেগ দুর্বল হয়ে পড়ে।  অথবা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সরু ধারায় প্রস্রাব হতে থাকে।  এই অবস্থাটি সংশয় বা দ্বিধাগ্রস্ততা (Hesitancy) নামেই পরিচিত।  

২) প্রচন্ড বেগ আসার পরেও টয়লেটে গিয়ে প্রস্রাব শুরু হতে দেরি হয়।

৩) প্রস্রাবের কোনও সামঞ্জস্য থাকে না।  কিছুটা হয়, বন্ধ হয়, আবারও হয় এবং শেষে ফোঁটায় ফোঁটায় হয়।

৪) রাতে বারবার প্রস্রাব হয়।  ঘুমের চেয়ে বাথরুমেই বেশি ছুটতে হয়।  দিনের বেলাতেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব হয়।  

৫) প্রস্রাব করতে দীর্ঘ সময় লাগে।  আগে যেখানে সময় লাগত দেড় থেকে দু-মিনিট, প্রস্টেট বেড়ে গেলে সময়টা দ্বিগুণ বা তিন গুণ বেড়ে যায়।  

৬) প্রস্রাব যেন চেপে রাখা যায় না।  

৭) আবার কারও কারও প্রস্রাব করার সময় প্রবাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, ফের শুরু হয়।  

প্রস্টেট খুব বেশি মাত্রায় বাধা দান করলে প্রস্রাব করাই খুব কঠিন হয়ে পড়ে।  অথচ মূত্রনালির পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।  সেটা বেশ জটিল সমস্যা।  সে ক্ষেত্রে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।  প্রয়োজনে প্রস্টেট সার্জারির মাধ্যমে এই বাধাকে অপসারিত করা হয়।

এই রোগের চিকিৎসা কী? 

চিকিৎসক প্রাথমিক ভাবে রোগীর উপসর্গের ইতিহাস এবং অনেক সময়ে ইউরোফ্লোমেট্রির রিপোর্ট দেখে নিয়ে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করেন।  অনেক সময় রক্ত পরীক্ষারও প্রয়োজন হয়।  পরীক্ষাগুলির মধ্যে কিডনির কার্যকারিতা বিচার করতে ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা ও প্রস্টেট স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন বা পি এস এ -পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনের মূত্র প্রাবাহের মাত্রা পরীক্ষা করতে রোগীকে একটি বিশেষ যন্ত্রের (Uroflow Machine) মধ্যে প্রস্রাব করতে বলা হয়, পরীক্ষাটি খুবই সহজ।

প্রস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি সংক্রান্ত চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘ট্রন্সিউরেথ্রাল রিসেকশন অব দ্য প্রস্টেট’ বা সংক্ষেপে টি ইউ আর পি– অপারেশনকে ‘গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড’ ধরা হয়।  পশ্চিমবাংলায় প্রস্টেট গ্রন্থির টি হউ আর পি অস্ত্রোপচারটিকে অনেকেই বলেন প্রস্টেটের মাইক্রোসার্জারি।  প্রসঙ্গত বলা ভাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে আমেরিকায় ইউরোলজিস্টরা বিশ্বে প্রথম টি হউ আর পি অপারেশন শুরু করেছিলেন।  বর্তমানে অবশ্য গোটা বিশ্বের অধিকাংশ প্রস্টেট গ্রন্থির অপারেশন এই পদ্ধতির সাহায্যেই করা হচ্ছে।

Leave a comment