সাইনাস কী?
নাকের দুই পাশে আমাদের মুখের যে কিছু হাড় থাকে এর ভেতরে এক ধরনের কুঠুরি থাকে। এখানে স্বাভাবিকভাবে বাতাস থাকে। এটিকে বলে সাইনাস। সাইনাসের কাজ হলো ভেন্টিলেশনে সাহায্য করা। সাইনাসের ভেতরে কিছু মিউকাস থাকে। এগুলো দিয়ে কিছু নিঃসরন হয়। এগুলো এখানে জলের মতো জমে সেগুলো নাক দিয়ে বের হয়ে আসে। সাইনাস এর কাজ হলো আমাদের মাথাকে হালকা অনুভূত করা। আমরা যে কথা বলি তাতেও সাইনাস সাহায্য করে। সাইনাস নাকের দুই পাশে এবং কপালের ওপরের দুই পাশে থাকতে পারে।
সাইনোটাইসের লক্ষনগুলি কী?
সাইনোসাইটিসের প্রধান লক্ষণ ব্যথা। সাইনোসাইটিস হলে কপালের সামনের অংশে এবং নাকের পাশের অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। সামনের দিকে ঝুঁকলে এ ব্যথা বাড়ে।
সাধারণত সকালের দিকে সাইনোসাইটিসের ব্যথা বাড়ে। দীর্ঘমেয়াদি হাঁচি, কাশি বা নাক বন্ধ থাকলেই সেটি সাইনোসাইটিস নয়। বিশেষ ধরনের এ ব্যথাটিই সাইনোসাইটিসের প্রধান লক্ষণ। ব্যথার সঙ্গে জ্বর বা হাঁচি-কাশিও থাকতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদি এ সমস্যা থাকলে জ্বর থাকে না।
মাইগ্রেন এবং সাইনোসাইটিস কী এক রোগ?
মাইগ্রেন এবং সাইনোসাইটিস কখনোই এক রোগ নয়।মাইগ্রেন এক বিশেষ ধরনের মাথাব্যথা, যেটি প্রায়ই হতে থাকে।এটি সাধারণত মাথার যে কোনো এক পাশের একটি স্থান থেকে শুরু হয়ে আস্তে আস্তে সেই পাশের পুরো স্থানেই বিস্তৃত হয়। মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর দৃষ্টিবিভ্রম এবং বমি কিংবা বমির ভাব থাকতে পারে। সুতরাং এই ব্যাপারে আর কোনো সন্দেহই থাকে না যে ,সাইনোসাইটিস ও মাইগ্রেন এক নয়।
সাইনাস প্রতিকারের জন্য কী কী করা উচিত?
১) সাইনোসাইটিসের সমস্যা হলে প্রচুর জল পান করুন। প্রচুর পরিমাণে জল খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে। শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে গেলে সেটা ধীরে ধীরে বের হয়ে যায় নিজে থেকেই। তাই সাইনোসাইটিসের সমস্যা দেখা গেলে সারাদিন প্রচুর জল পান করতে থাকুন।
২) একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, রসুনের মধ্যে রয়েছে একাধিক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা। এক কথায় এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক। তাই প্রতিদিন অন্তত এক কোয়া রসুন খেলে ভাইরাল ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণজনিত সমস্যা বা সাইনোসাইটিস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও প্রতিদিন দুই কোয়া রসুন দুই চা চামচ মধুর সঙ্গে দিনে দু বার খেলে সাইনোসাইটিস সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। প্রতিদিন এক চামচ পেঁয়াজের রস এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিলিয়ে খেলেও সাইনোসাইটিসের সমস্যা কিছুটা কমে যাবে। এছাড়াও এক চামচ আদা কুচির সঙ্গে এক চামচ মধু খেলে সাইনোসাইটিসের কারণে হওয়া মাথাব্যথা থেকে কিছুটা রেহাই মিলবে।
৩) কম জলীয়বাষ্পযুক্ত স্থানে সাইনোসাইটিসের সমস্যা বেড়ে যায় এবং বেশি কষ্ট হয়। আবার বেশি জলীয় বাষ্প যুক্ত যায়গাতেও শ্লেষ্মার প্রকোপ বাড়ে। তাই চেষ্টা করুন এমন যায়গায় থাকতে যেখানে জলীয় বাষ্প বা বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ স্বাভাবিক। স্যাঁতসেঁতে কিংবা অতিরিক্ত শুষ্ক আবহাওয়া এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত আলো বাতাস আছে এমন জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।
৪) সাইনোসাইটিস সমস্যায় গরম পানির ভাপ বা সেঁক নেওয়া একটি অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি। গরম পানির ভাপ নিলে নাসিকা পথ ভেজা থাকবে এবং সহজেই শ্লেষ্মা বের হয়ে আসবে। তাই গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে নিয়ে দিনে দু’ বার করে ভাপ নিন।
৫) সাইনোসাইটিসের কারণে যখন নাকে, মাথায় অথবা কপালে অস্বস্তি লাগবে তখন গরম পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে ভাল করে নিংড়ে নিন। এরপর এই তোয়ালেটা মুখের উপর দিয়ে শুয়ে থাকুন কিছুক্ষণ। এই পদ্ধতিতে তাৎক্ষনিকভাবে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
৬) যখন বাইরে বের হবেন তখন তো আর গরম পানির ভাপ বা সেঁক নেওয়া সম্ভব না। তাই বাড়ির বাইরে যতক্ষণ থাকবেন, চেষ্টা করবেন কিছুক্ষণ পর পর চিনি ছাড়া গরম চা, কফি বা স্যুপ খাওয়ার। গরম তরল খাবারগুলো খেলে শ্লেষ্মা পাতলা হয়ে আসে এবং সহজে পরিষ্কার হয়ে যায়।
৭) সিগারেটের ধোয়া, ধুলোবালি, হেয়ার স্প্রে, বডি স্প্রে ইত্যাদি জিনিসগুলো থেকে দূরে থাকুন। এ ধরণের জিনিসগুলো নাসিকা পথে ঢুকে যায় এবং সাইনোসাইটিস সমস্যা বাড়ায়। রাস্তায় বের হলে নাকে কাপড় দিয়ে রাখুন বা মাস্ক পড়ে নিন। তাহলে ধুলোর সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে এবং সাইনোসাইটিসের সমস্যার আরামও পাওয়া যাবে।