লিভারের রোগ একটি বিশাল বড় চিন্তার বিষয়।লিভারের রোগ এতটাই সাংঘাতিক যে এতে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।তবে বর্তমানে চিকিৎসা বিজ্ঞান হয়ে গেছে বিশাল পরিমাণে উন্নত। ফলে লিভারের এও কঠিন অসুখ সহজেই লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্টের মাধ্যমে সারানো সম্ভব হচ্ছে।পূর্ণ বয়স্ক একজন ব্যক্তি তার যকৃতের অংশ বিশেষ অপর একজনকে দিতে পারেন। কারণ যকৃতই শরীরের একমাত্র অঙ্গ যেটা নিজেই ক্ষতপূরণ করে পুনর্গঠিত হয়।

দীর্ঘমেয়াদি লিভার রোগ অথবা স্বপ্লমেয়াদি মারাত্মক লিভার রোগের কারণে কোনো ব্যক্তির লিভারের কার্যকারিতা একেবারে কমে গেলে অথবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বা প্রতিস্থাপনের কথা বিবেচনা করা হয়। এটা বোঝা তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, খুবই সাধারণ প্রক্রিয়া হলো লিভার ট্রান্সপ্লান্ট। এসব ক্ষেত্রে দাতার শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। এর জন্য সাহস রাখা জরুরি। সেটা খুবই প্রয়োজন।

লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যানটেশন বা যকৃৎ প্রতিস্থাপণ কি? 

লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সর্ববৃহৎ অঙ্গ। শরীরকে সুস্থ রাখতে প্রয়োজন সুস্থ লিভার। লিভারকে বলা হয় শরীরের পাওয়ার হাউস, যা জীবন-ধারণের জন্য অপরিহার্য। লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন অর্থ মানবদেহের অকার্যকর লিভার ফেলে নতুন লিভার প্রতিস্থাপন করা। কোনো ব্যক্তির রোগাক্রান্ত লিভার অপসারণ করে সেই স্থানে দাতা ব্যক্তির সম্পূর্ণ অথবা আংশিক সুস্থ লিভার প্রতিস্থাপন করাকে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন বলা হয়। একজন জীবিত সুস্থ ব্যক্তি লিভারের একটি অংশ তার কোনো নিকটাত্মীয়কে দান করতে পারেন।

লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করাতে গেলে কি কি ধরণের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়? 

লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করাতে গেলে বিভিন্ন ধরনের প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয় বিশেষ করে প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশ ভালোই লিভার পাওয়া যায়। শিশুদের ক্ষেত্রেই আমরা প্রধানত বেশি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়।

যকৃৎ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে সফলতার হার কত এবং কারা যকৃৎ দান করতে সক্ষম? 

সফলতার হার নির্ভর করে লিভার গ্রহণকারীর অসুস্থতা কতটা সিরিয়াস তার ওপর, সব মিলিয়ে সফলতার হার শতকরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ।অ্যাপোলো হাসপাতাল লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য আদর্শ এবং প্রথম হাসপাতাল, যেটি সফলতার সঙ্গে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু করেছে। সব আধুনিক সেবা তাৎক্ষণিকভাবে সার্বক্ষণ পেয়ে থাকে রোগীরা।

১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়স্ক কোনো সুস্থ ব্যক্তির রক্তের গ্রুপ গ্রহীতার রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিললেই তিনি তাঁর যকৃতের একটি অংশ ওই ব্যক্তিকে দান করতে পারবেন। সুস্থ ব্যক্তি তাঁর যকৃতের একটি অংশ (ডান অথবা বাঁ দিক) কোনো নিকট আত্মীয়কে দান করতে পারেন। এমনকি কারও ব্রেন ডেথ বা জীবন রক্ষাকারী সাপোর্টসমূহ সরিয়ে নেওয়ার পরের অবস্থায় তাঁর নিকট আত্মীয়র অনুমতি সাপেক্ষে যকৃৎ অপসারণ করে তা প্রতিস্থাপন করা যাবে। জরুরি ক্ষেত্রে রক্তের গ্রুপ না মিললেও ‘এবিও ইনকমপেটেবল’ দাতা হিসেবেও যকৃৎ দান করা যায়। তবে খুব বেশি ব্যয়বহুল হবে।

সাধারণত কত দিন লাগে এই পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে? 

সাধারণত একজন রোগীর ক্ষেত্রে হাসপাতালে ২১ দিন এবং দাতার ক্ষেত্রে ১০ দিন প্রয়োজন হয়। সার্জারির আগে দাতা এবং গ্রহীতা উভয়েরই ৮-১০ দিন হাসপাতালে থাকতে হতে পারে।বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী ভারতের এই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসে। এর মধ্যে ২০০’র বেশি রোগী লিভার ট্রান্সপ্লান্ট (যকৃৎ প্রতিস্থাপন) করেছেন দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে।

 অ্যাপোলো হাসপাতালে ১৯৯৮ সালে সফলভাবে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট শুরু করে এ পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়েছে। এই হাসপাতাল ভারতের প্রথম জেসিআই কর্তৃক অনুমোদিত হাসপাতাল। দিল্লি সরকার ও অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে এই হাসপাতাল। এতে ৫৭টি বিভাগে তিনশ’র বেশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রয়েছেন। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা রয়েছে এই হাসপাতালের। ১৯৯৮ সালে দিল্লি অ্যাপোলো হাসপাতালে প্রথমবারের মতো সফল লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়। তখন থেকে দুই হাজার নয়শ’র বেশি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন হয়, যার মধ্যে ২৩৫ জনই ছিল শিশু।

যকৃৎ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে খরচ কিরকম হয়? 

প্রাপ্তবয়স্কদের লিভার প্রতিস্থাপনে খরচ ২১ লাখ ইন্ডিয়ান রুপি এবং শিশুদের লিভার প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ১৯ লাখ ইন্ডিয়ান রুপি। এই খরচের মধ্যে রয়েছে হাসপাতালে অবস্থান, বিভিন্ন টেস্ট ও ওষুধের খরচ।

 

Leave a comment