হাঁটাহাঁটিই হল সবচাইতে পুরনো এক্সারসাইজ। আগেকার দিনে তো গাড়িঘোড়া ছিল না। মানুষকে পায়ে হেঁটেই গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যেতে হতো। এই চরম শারীরিক পরিশ্রমের ফলে তাঁদের হার্ট থাকত সুস্থ! আলাদা করে কোনও ওষুধের প্রয়োজন হতো না। শরীরে মেদ জমার অবকাশ থাকত না। রাতে ঘুম হতো নিশ্ছিদ্র!
আগেকার দিনে প্রবাদ ছিল— চলনে বলে মরণের খবর! অর্থাৎ কারও হাঁটার ভঙ্গি দেখেই বুঝে ফেলা যায় সে শারীরিকভাবে কতটা সুস্থ! যে ব্যক্তি হনহন করে হাঁটেন, তিনি শারীরিকভাবে শক্তসমর্থ এবং তাঁর বেশিদিন বাঁচাই স্বাভাবিক।
হাঁটার অভ্যেসকে আমরা যোগের পরিভাষায় বলি ‘ভ্রমণ প্ৰাণায়াম।’ প্রশ্ন হল, কেন প্রাণায়াম শব্দটির ব্যবহার হচ্ছে? কারণ, শুধু শরীর সুস্থ রাখলে তো হবে না। শরীরের সঙ্গে মনের সুস্থতাও জরুরি। শরীরের সঙ্গে মনের সম্পর্ক আসলে সমানুপাতিক। শরীর ভালো থাকলে মন ভালো থাকবে, আর মন ভালো থাকলে শরীর ভালো থাকে।
হাঁটার সুফল: পায়ের পেশি শক্ত হয়। তবে হাঁটতে হলে শরীরের সবগুলি পেশিকেই শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। এই কারণে হাঁটলে শরীরের সব পেশিগুলিরই এক্সারসাইজ হয়। সব পেশিগুলি কাজে লাগার ফলে দ্রুত ফ্যাট পোড়ে!
এছাড়া ওজন বাড়লে কোলেস্টেরল, রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো মেটাবলিক সমস্যা হতে শুরু করে। হাঁটলে মেদ ঝরার পাশাপাশি এই ধরনের মেটাবলিক ডিজঅর্ডারগুলিরও সমাধান হয়ে যায়।
কীভাবে হাঁটবেন: নিরবচ্ছিন্নভাবে হাঁটতে পারলে খুব ভালো হয়। অর্থাৎ এমন রাস্তায় হাঁটুন যেখানে গাড়িঘোড়ার উপদ্রব কম থাকে। এছাড়া হাঁটার রাস্তাও এবড়োখেবড়ো না হলেই ভালো হয়। এই কারণে পার্কে হাঁটতে গেলে ভালো। হনহন করে হাঁটতে হয়। তাই পায়ে স্নিকার্স পরুন। এছাড়া খুব টাইট বা খুব ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন না। মন এবং হাঁটাহাঁটি: নিরবিচ্ছিন্নভাবে
হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে মনে মনে ‘ওম’ ধ উচ্চারণ করতে পারেন। হাটার সময় এমন কোনও চিন্তা মনের মধ্যে আনবেন না যা আপনার দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া হাঁটার সময় চার পা শ্বাস নিতে নিতে হাঁটুন, আর চার পা শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে হাঁটুন।
হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে প্রাণায়ামও হয়ে যাবে। প্রাণায়ামে শরীরের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়ে। মন শান্ত হয়। মনোযোগ বাড়ে। স্ট্রেস কমে।
আর হাঁটার সময় মোবাইল ফোন বন্ধ রাখবেন।
কতক্ষণ হাঁটবেন: কতক্ষণ হাঁটবেন তা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করে। মোটামুটি দৈনিক ৩৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা অবধি হাঁটা যায়।
হাঁটতে যাওয়ার বেলা: সকালে হাঁটাই ভালো। তবে সকলের হাতে সময় কম। সেক্ষেত্রে একেবারে ৪০ মিনিট হাঁটতে না পারলে সকালে ২০ মিনিট হেঁটে ফের বাড়ি ফেরার সময় ২০ মিনিট হেঁটে ফেলুন। এভাবেও কাজ হবে। এভাবেও সুস্থ থাকা সম্ভব।