হাঁটুর ব্যথা একটি খুব সাধারন রোগ যা সর্ব বয়সের সব মানুষের ভোগান্তির কারণ হয়। হাঁটুর ব্যথা কোন ক্ষতর কারণেও হতে পারে, যেমন লিগামেন্টের ক্ষত হলে কিংবা কার্টিলেজ ছিড়ে গেলেও হাঁটুর ব্যথা দেখা দেয়। আবার সাধারণ বাত, গাউট কিংবা অন্যান্য সংক্রমণের কারণেও হাঁটুর ব্যথা হতে পারে।
সাধারণ ছোটখাটো হাঁটুর ব্যথা হলে তা নিজেদের যত্ন দ্বারাই নিরাময় করা সম্ভব। ফিজিওথেরাপি কিম্বা হাটুর জন্য হাঁটু বন্ধনী (knee cap) ব্যবহার করে এইরকম হাঁটুর ব্যথা থেকে নিস্তার পাওয়া যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই হাঁটুর ব্যথা খুব সাংঘাতিক কোন কারণের জন্যও হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ও লাগতে পারে।
হাঁটু ব্যথার লক্ষণগুলো কী কী ?
হাঁটু ব্যথার স্থান এবং কতটা তার ব্যথার তীক্ষ্ণতা হবে তা মাঝে মাঝে নির্ভর করে হাঁটুর ব্যথার কারণের ওপর। যেসব লক্ষণ হাটু ব্যাথার সময় দেখা যায় সেগুলি হল:
১। হাঁটু ফুলে যাওয়া এবং শক্ত হয়ে যাওয়া।
২। ব্যথার জায়গায় লাল হয়ে যাওয়া এবং জায়গাটি উষ্ণ গরম হয়ে যাওয়া।
৩। শরীর দুর্বল লাগা।
৪। হাঁটু নাড়াচাড়া করলে তার মধ্যে থেকে আওয়াজ হওয়া।
৫। হাঁটু পুরোপুরি সোজা করতে না পারা।
কখন ডাক্তার দেখানো প্রয়োজনঃ
অনেক সময় ছোটখাটো হাঁটুর ব্যথা হলে লোকে তা এড়িয়ে যায়। সহজে লোকজন হাঁটুর ব্যথার জন্য ডাক্তার দেখায় না। তবে তা প্রচন্ড পরিমাণে হলে ডাক্তার দেখানোর দরকার আছে বৈকি। ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন যখন-
১।ভার বহন করার সময় মনে হয় যে হাঁটু সেই ভার নিতে পারছে না এবং তা স্থির থাকছে না নিজের জায়গায়।
২।যদি প্রচন্ড ব্যথায় হাঁটু ফুলে যায়।
৩।যদি হাঁটুকে সম্পূর্ণভাবে লম্বা করতে অক্ষম হন কিংবা ভাঁজ করতে অক্ষম হন তাহলে ও ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন।
৪।যদি হাঁটুর আকার কোনরকম অদ্ভুত দেখা যায় তাহলে ও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৫।হাঁটুর ব্যথার সাথে সাথে যদি প্রচন্ড রকমের জ্বর আসে কিংবা হাঁটুর ব্যথা জায়গা যদি ফুলে লাল হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৬।এছাড়াও যদি কোনো ক্ষত থেকে হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হাঁটুর সমস্যা নিরাময়ের জন্য শহরের সবচেয়ে ভালো ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করুনঃ
কীভাবে এড়ানো যাবে হাঁটুর ব্যথা ?
যদিও সব সময় হাঁটুর ব্যথা এড়ানো সম্ভব হয় না। তবে নিচের প্রক্রিয়াগুলো অবলম্বন করলে হাঁটুর ক্ষত থেকে এবং হাঁটুর হাড় সরে যাওয়া আশঙ্কা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রক্রিয়া গুলি হলঃ
১) শরীরের ওজন কমাতে হবেঃ
সব সময় শরীরে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হাঁটুর ব্যথা এড়ানোর জন্য। আপনার শরীরের ওজন যত বাড়বে আপনার হাঁটুর ওপর চাপ তত বাড়বে। হাটুর ওপর চাপ বাড়লে তা হাঁটুর ক্ষত এবং আর্থারাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
২) শরীর গঠন করতে খেলাধূলায় যোগ দিনঃ
মাংসপেশিকে দৃঢ় করতে হবে। এবং তার জন্য বিভিন্ন ধরনের ক্রীড়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে। কাজের থেকে সময় বের করে শরীরকে উপযুক্ত বানাতে হবে। একজন কোচের সাহায্য নিয়ে সঠিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে শরীরচর্চা করতে হবে।
৩) সঠিকভাবে অনুশীলন করুনঃ
শরীরচর্চা করা কালীন এটি খেয়াল রাখতে হবে যাতে সঠিক প্রক্রিয়ায় শরীরচর্চা করা হয়। এইজন্য পেশাদার কারোর কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে।
৪) শরীরের মাংসপেশী শক্ত এবং নমনীয়(flexible) করুনঃ
দুর্বল মাংসপেশী হাঁটুর ব্যথা সবচেয়ে বড় কারণ হতে পারে। এর জন্য মাংসপেশিকে সফল করা অত্যন্ত প্রয়োজন। সবল করার সাথে সাথে মাংসপেশিকে নমনীয় করতে হবে। যাতে হাঁটু সহজে নাড়াচাড়া করা যায়।
৫) বুদ্ধিমত্তার সাথে শরীরচর্চা করুনঃ
বুদ্ধি দিয়ে শরীর চর্চা করা প্রয়োজন। আপনার যদি আর্থারাইটিস কিম্বা বংশগত হাঁটুর ব্যথা থাকে কিংবা কোন ক্ষত থেকে যদি হাঁটুর ব্যথা আগে থেকে হয়ে থাকে তাহলে হয়তো আপনার শরীর চর্চার প্রক্রিয়াকে বদল করতে হতে পারে। সাধারণ শরীরচর্চার বদলে সাঁতার কাটা, জলের সাথে সংযোজিত যেসব যোগা আছে সেগুলো করতে পারেন অথবা যেসব শরীরচর্চায় হাঁটুর ওপর জোর কম পড়ে সেই শরীরচর্চা গুলি করে দেখতে পারেন। সপ্তাহের প্রত্যেকদিন না করলেও অন্তত প্রত্যেক সপ্তাহে দু-তিন দিন করে করার চেষ্টা করবেন। কখনো কখনো এইসব শরীর চর্চার মাধ্যমেই হাটুর ব্যাথা সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব হয়।
ভালো থাকতে এবং হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বণ করুন।শরীরচর্চা করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করুন কারণ স্বাস্থ্যই তো সম্পদ।